🌐 মুদ্রাস্ফীতি: সংজ্ঞা
মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) হল একটি অর্থনৈতিক অবস্থা যেখানে পণ্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। সহজভাবে বলা যায়, একই টাকায় আগের মতো পণ্য ও সেবা কেনা যায় না।
🔍 মুদ্রাস্ফীতির কারণ
১. চাহিদা-সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি (Demand-pull Inflation)
- যখন ভোক্তাদের চাহিদা অতিরিক্ত বেড়ে যায় কিন্তু সরবরাহ সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পায় না।
- উদাহরণ: উৎসবের সময় পোশাকের চাহিদা বেড়ে যাওয়া।
২. ব্যয়-সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি (Cost-push Inflation)
- উৎপাদনের খরচ (কাঁচামাল, শ্রম ইত্যাদি) বেড়ে যাওয়ার ফলে পণ্যের মূল্য বাড়ে।
- উদাহরণ: তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে পরিবহন খরচ বাড়ে।
৩. মুদ্রার অতিরিক্ত সরবরাহ (Monetary Inflation)
- কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত টাকা ছাপালে বা অর্থনীতি অতিরিক্ত তারল্যপূর্ণ হলে।
৪. আমদানিকৃত মুদ্রাস্ফীতি (Imported Inflation)
- আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে তা দেশে আমদানি করতে গিয়ে মূল্য বাড়ে।
৫. মজুরি-স্ফীতি (Wage Inflation)
- শ্রমিকদের উচ্চ মজুরি দাবি ও সেই অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ে।
🔗 মুদ্রাস্ফীতির প্রকারভেদ
প্রকার |
ব্যাখ্যা |
১️⃣ হালকা মুদ্রাস্ফীতি (Creeping or Mild Inflation) |
প্রতি বছর ৩% এর নিচে মূল্যবৃদ্ধি। |
2️⃣ দৌড়বিদ মুদ্রাস্ফীতি (Walking Inflation) |
বার্ষিক ৩% থেকে ১০% পর্যন্ত। |
3️⃣ দগ্ধকারী মুদ্রাস্ফীতি (Galloping Inflation) |
বার্ষিক ১০% এর বেশি। |
4️⃣ সুপার মুদ্রাস্ফীতি (Hyperinflation) |
অত্যন্ত উচ্চ গতির মূল্যবৃদ্ধি, যেমন প্রতি মাসে শত শত শতাংশ। |
📊 মুদ্রাস্ফীতির সুদূরপ্রসারী প্রভাব
🔹 ইতিবাচক প্রভাব
- পণ্যের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা বেশি লাভ করে।
- উৎপাদন খাত সম্প্রসারণ লাভ করে।
- বিনিয়োগের প্রবণতা বাড়ে।
🔹 নেতিবাচক প্রভাব
- মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
- জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়।
- সঞ্চয়ের হার কমে যায়।
- আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।
- আর্থিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
- বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যাওয়ায় অর্থনীতি স্থবির হতে পারে।
🎯 উপসংহার
মুদ্রাস্ফীতি একটি স্বাভাবিক অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া, তবে এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতিকে সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। সুষম নীতিমালার মাধ্যমে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সমস্যা মোকাবেলা করতে পারে।